মাথা ছাড়া ১.৫ বছর বেঁচে থাকা মুরগি!
November 17, 2022
0
১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্রুইটা শহরে এক কৃষক দম্পতি বাস করতেন। তাদের নাম যথাক্রমে লয়েড ওলসেন এবং ক্লারা ওলসেন।
১০ সেপ্টেম্বরের সেই দিন ক্লারা খুব আনন্দিত ছিলেন, কারণ তার মা আজ তার বাড়ি বেড়াতে আসছেন। আর তাই মায়ের পছন্দের খাবার তৈরি করার জন্য তিনি মনোযোগ দিচ্ছিলেন। ক্লারার মা অর্থাৎ লয়েডের শাশুড়ি মুরগির গলা খেতে খুব পছন্দ করতেন। তাই ক্লারা তার স্বামীকে পাঠালেন একটি মুরগি জবাই করে নিয়ে আসার জন্য। শাশুড়ির এ পছন্দের কথা লয়েডেরও অজানা ছিলো না। তাই তিনি খুব দেখেশুনে সাড়ে পাঁচ মাস বয়সী এক মুরগীর বাচ্চাকে বেছে নিলেন। বাচ্চা এ মোরগটির নাম ছিলো মাইক।
লয়েড মাইককে জায়গায় বসিয়ে কুড়ালটি মাইকের দিকে তাক করলেন। শাশুড়ী যেনো গলার পুরোটাই খেতে পারে তাই তিনি শুধু মাথাটুকুই কাটতে চাইছিলেন।
লয়েড কুড়াল চালালেন মুরগীর উপর কিন্তু ঠিকমতো চালাতে পারলেন না, মাথার পুরো অংশটি কাটলো না। মাইকের মস্তিষ্কের প্রায় পুরো অংশটিই তিনি কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ব্যাপারটা এখানে শেষ হয়ে যেতে পারতো কিন্তু শেষ হলো না! বরং ঘটনার শুরু হলো এখান থেকেই। ভয়াবহ আঘাতের পর মাইক অন্য ৮/১০ টা মুরগীর মতো মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকলো, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার উঠে দাঁড়ালো। শুধু তা-ই নয়। লয়েডের চোখ কপালে তুলে দিয়ে সে মাটি থেকে খাবার খুঁটে খাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো!
মোরগটির এ অবস্থা দেখে অবশেষে দয়া হলো তার মালিকের। মাইককে ছেড়ে দিলেন তিনি।
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫) পরদিন সকালের কথা।
লয়েড আসলেন মাইককে দেখতে। তিনি ভেবেছিলেন এতক্ষণে মাইক বোধহয় মরে গেছে। কিন্তু মুরগির খোঁয়াড়ে এক নজর তাকিয়ে তিনি বিস্মিত হন। মাইক তার কাটা মাথাটি পাখার নিচে নিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে!
একটি প্রাণির বাঁচার এত আকুলতা দেখে লয়েডের মন গলে গেলো। তিনি মাইকে বাঁচাতে তৎপর হয়ে উঠেন।
মাইক কিভাবে বেঁচে গেলো তা বুঝতে লয়েড মাইককে সাথে নিয়ে ২৫০ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনি চলে গেলেন সল্ট লেক সিটির উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার সংশয়বাদী বিজ্ঞানীরাও অপেক্ষা করছিলেন মাইককে দেখার জন্য, বুঝতে চাচ্ছিলেন মাথা ছাড়াও একটি মোরগের বেঁচে থাকার রহস্য।
অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা বুঝতে পারলেন, লয়েডের কুড়ালের আঘাত মাইকের মাথার কিছুটা কাটতে পারলেও কাটতে পারেনি তার জুগুলার ভেইন। সেই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্তও অবিরাম রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে মাইককে। যেহেতু একটি মুরগীর রিফ্লেক্স অ্যাকশনের অধিকাংশই তার মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাই মাইক আসলে পুরোপুরি সুস্থই ছিলো। শুধু তার মাথাটাই ছিলো না, এটুকুই!
এবার মাইক ভাবলেন এই চমৎকার মাইক কে নিয়ে ব্যবসা করলে তো মন্দ হয় না! আর সেজন্য তিনি মাইক কে সাথে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। ধীরে ধীরে মাইক জনপ্রিয় হতে শুরু করলো। তাকে নিয়ে ফিচার করলো বিখ্যাত টাইম ও লাইফ ম্যাগাজিন। এছাড়াও গিনেস বুকেও জায়গা করে নিলো মাইক।
Tags
Share to other apps