মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

Predeator24
0
মানুষ সামাজিক জীব। আর জীবন চলার পথে আমাদের অনেক সময় নানারকম ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলা করতে হয়। আর এগুলোর জন্য শারিরীক অসুস্থতার পাশাপাশি আমরা অনেক সময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ বা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা সকলেই নিজেদের শারিরীক স্বাস্থ্যের ব্যাপারের সচেতন হলেও অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা খেয়াল রাখি না। কিন্তু উভয় ধরনের সুস্থতা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আপনি যদি মানসিকভাবে কিছুটা অসস্তি বোধ করেন এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন, এখানে বিস্তারত আলোচনা করা হয়েছে। মানসিক রোগ কি এবং কেন হয়? মানসিক রোগ হলো কোনো ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরন ও জীবন-যাপনের চিত্র। এক্ষেত্রে মানুষ নানারকম মানসিক চাপ, অস্বস্তিতে ভোগেন এবং বিচলিত হয়ে পড়েন। এটি সাধারণত ঘটে মস্তিষ্কের রোগের কারণে। একজন মানসিক রোগির নিজের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবন অব্যাহত হয়। মানসিক রোগকে মুলত দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ ১. নিউরোটিক ২. সাইকোসিস নিউরোটিকঃ এই ধরনের মানসিক রোগ হয় সাধারনতদুশ্চিন্তা, অস্বাভাবিক রাগ, ইন্টারনেট ও মাদকাসক্তি, প্যানিক, যৌন সমস্যা ইতাদি কারণে। এই ধরনের মানসিক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সাইকোসিসঃ এটি হলো সবচেয়ে গুরুতর মানসিক সমস্যা। সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি কারণে সাইকোসিস মেন্টাল ডিজ-অর্ডার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এই ধরনের রোগের শিকার। মানসিক রোগের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত কয়েকটি কারণে মানসিক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো হলো জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব, পরিবেশগত প্রভাব, শারীরিক ও মানসিক যৌন-নির্যাতন, অস্বাভাবিকভাবে শিশুর লালন-পালন, দীর্ঘমেয়াদী অস্বাভাবিক চাপ, ইন্টারনেট সহ অন্যান্য নেশা দ্রব্যের প্রতি অধিক আগ্রহ, মস্তিষ্কের গঠন জনিত সমস্যা, নিউরো ট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা, কিডনি, যকৃত, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব। এছাড়া মৃগীরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিকস্, মাথায় আঘাত, ব্রেইন টিউমার, হৃদপিণ্ডের ফেইলিয়রও মানসিক রোগের কারণ হতে পারে। কিভাবে বুঝবেন যে আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ কি না? একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মেখলা সরকার বলেন, যখন কোনো ব্যক্তির আচরনের বড় ধরনের ও লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে আবেগ প্রকাশে পরিবর্তন আসে এবং সেটা দৈনন্দিন কর্মকান্ডে প্রভাব ফেলে তখন বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগের কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলোঃ হঠাৎ করে কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে ওঠা অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে চলা সবার সাথে ঝগড়া বা বাগবিতন্ডায় জড়ানো অনেকদিন যাবত নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখা টানা ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে বিষন্নতায় ভোগা বিনাকারণে অন্যদেরকে সন্দেহ করা গোসল করা, দাত ব্রাশ করার মতো নিয়মিত কাজে গাফিলতি করা নিজের প্রতি উদাসীন থাকা এবং শারিরীক যত্ন না নেওয়া পূর্বে ভালো লাগতো এমন কর্মকান্ডে আগ্রহ কমে যাওয়া খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া অতিরিক্ত শুচিবায়ুগ্রস্থ হয়ে ওঠা সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া সময়মতো না ঘুমানো এবং ঘুমের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া। ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় প্রাকৃতিকভাবেই সকল মানুষ ও প্রাণীর মাঝে কম-বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এটা প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং কারো ক্ষেত্রে কিছুটা কম, তবে সবার মাঝেই এটি আছে। নানারকম শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে। এটি মানুষের জৈবিক গঠন, মানসিক গঠন ও সামগ্রিক মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। অন্যান্য রোগের মতো মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বেশ কতগুলো কার্যকরী উপায় আছে। সেগুলো হলোঃ ১. পরিস্থিতি এড়িয়ে না যাওয়াঃ আমাদের জীবনে কখনো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর, কষ্টদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা সেটাকে এড়িয়ে যেতে চাই এবং সেখান থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব হয়ে দাঁড়ায়। এধরনের পরিস্থি এড়িয়ে না গিয়ে বরং সেটাকে মোকাবিলা করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আগামী দিনগুলো অতিবাহিত করা উচিৎ। এতে করে আমরা নিজেদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মতৃপ্তি পাবো। ২. অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে না ভেবে বর্তমানে মনোযোগ দেওয়াঃ আমরা, মানুষেরা স্বভাবতই অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকি। অতীতের নানা রকম পাওয়া, না-পাওয়ার হিসাব আমাদেরকে আফসোস করায়। এতে নানারকম দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। আবার ভবিষ্যতের নানাবিধ পরিকল্পনা আমাদেরকে বিচলিত করে তোলে। বর্তমান কাজে মননিবেশ করতে পারি না। এতে করে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ৩. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই দরকারী। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদও দূর হবে। ৪. মানুষকে সঙ্গ দেওয়াঃ একাকিত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করুন সবসময় ভালো মানুষদের সাথে থাকতে। সকলের সাথে হাসিখুশি আচরণ করলে এটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দিবে এবং আপনি বিচলিত হবেন না বরং প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ৫. সৃজনশীল ও কর্মঠ হয়ে ওঠাঃ সৃজনশীলতা মানুষকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আর মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করতে পারলে তার আনন্দিত হয় এবং তৃপ্তি দেয়। এতে করে নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখা সম্ভব এবং অন্যান্য দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখা সম্ভব। মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় ১০ টি উপায়ঃ মানসিক রোগ আমাদের স্বাভাবিক জীবন চলার পথে একটি অন্যতম অন্তরায়। এটি নানাভাবে আমাদের দৈনন্দিন আনন্দের মুহূর্তগুলো নষ্ট করে দেয়। এই অংশে আমরা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানাবো। উপরে উল্লিখিত মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়গুলোও মানসিক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। এগুলো ছাড়া আরো ১০ টি উপায় হলোঃ ১. অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া (এটা অধিক কার্যকরী) ২. কাজে ব্যস্ত থাকা ৩. পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া ৪. নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো ৫. ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা ৬. নিয়মিত ব্যায়াম করা ৭. নিয়মমাফিক জীবন-যাপন করা ৮. বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে মেলামেশা করা ১০. ধুমপান ও মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখা উপরের উল্লিখিত উপায়গুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপাকারী হবে। তবে পরামর্শ থাকবে দ্রুত ভালো ও অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top