আমার কিছু অপছন্দনীয় জিনিস

Predeator24
0
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়বস্তু আমার কাছে স্টাইল বা ফ্যাশন হলো সেটা, যা পরিধান করলে আমার ব্যক্তিত্ব বজায় থাকবে,যে পোশাকে আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করব, আমার এবং আমার পরিবারের সন্মান বজায় থাকবে, রুচিশীল হবে এবং সর্বোপরি আমার দৈহিক সৌন্দর্যের পরিপূরক হবে। যে পোশাক পরলে আমাকে এত বিসদৃশ লাগবে না যে অন্য কেউ আঙুল তুলে নিন্দনীয় কথা বলতে পারবেন।ছোট থেকে একটা কথা আমার ঠাম্মি আমাকে বলতেন — " আপ রুচি খানা, পর রুচি পরনা"। এই কথাটা আজীবন আপ্ত বাক্য হিসাবে মেনে এসেছি, পরবর্তীকালেও মানব। আমার এমনিতে পোশাক নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ নেই। কিন্তু কিছু পোশাকের ক্ষেত্রে আমি একটু ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি রাখি। আমি নিজে সব ধরণের পোশাক আশাক পরা পছন্দ করি, কিন্তু ওই আমাকে যেটাতে মানাবে সেটাই পরি।অন্যরা পরতেই পারেন, তার জন্য তাঁদের বিচার করিনা। শুধু বক্তব্য একটাই যে পোশাক আমায় স্বাচ্ছন্দ্য দেয়না, সেই পোশাক পরার কোনো অর্থ আমার কাছে নেই। এবার বলি কোন কোন পোশাক আমার অপছন্দ। ১) ছেঁড়া বা Ripped হট প্যান্ট। এই ধরণের প্যান্ট পরার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কিনা আমার জানা নেই। মালয়েশিয়াতে হট প্যান্টের প্রচলন অত্যন্ত বেশী। এই ধরণের প্যান্ট পরিহিতাদের দেখি নিজেরাও শান্তিতে থাকেন না। খুব একটা স্বচ্ছন্দে হাঁটতে বা বসতে পারেন না। তাহলে কি দরকার এমন পোশাক পরিধানের। খুব অস্বস্তিতে থাকেন তাঁরাও। ২) একই বক্তব্য রিপড ফুল জিন্সের ক্ষেত্রেও। পরলে পুরো পরব না হলে পয়সা দিয়ে ছেঁড়া জিন্সের দরকার নেই। একটা ঘটনা বলি।বছর ৭/৮ আগের ঘটনা। তখন রিপড জিন্স বাজারে খুব জনপ্রিয়। আমরা একদিন আমরা নিউমার্কেটে বাজার করতে গেছি। এই জিন্স পরিহিত একটি ছেলেকে দেখে আমার পুত্রের দুঃখ — " ইসস! মা দেখো কত গরীব আঙ্কলটা।একটা ছেঁড়া প্যান্ট পরেছে।বাবুয়ার কত ভালো ভালো প্যান্ট আছে দিয়ে দাও না একটা।" কথা শুনে আমারই দুঃখ পেয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম তোর বাবার থেকে বড়লোক তাই ওই ব্র্যান্ডেড ছেঁড়া জিন্স পরেছে। 🤦‍♀️🤦‍♀️ ৩) ব্লাউস ও সালওয়ারের কামিজের পিঠে দড়িতে বাঁধা ঝাপটাঃ আমার ঠিক কেন অপছন্দ এটা আমিও বলতে পারবনা। কিন্তু এই লম্বা দড়ির আগায় একগোছা ঝুনঝুনি লাগানো বস্তুটি দেখলেই বিরক্তি লাগে। আজ অবধি ব্যবহার করিওনি করবও না। ৪) অফ শোলডার টপঃ আমার পক্ষে অসম্ভব পরা। দেখলেই ভয় লাগে এই জিনিস। যারা পরেন দেখি সারাক্ষন প্রায় ওই নিয়েই ব্যস্ত। এই বুঝি খুলে পরে গেল। এমন জিনিস পরব কেন যেটা নিয়ে ভয়ে মরতে হবে সারাক্ষন। ৫) নাইটিঃ জানি এটা অধিকাংশ মহিলার আরামের পোশাক। আমার বড্ড অপচ্ছন্দের। পরিনা আমি। এই ধরণের নাইটি পরিনা। আর সারাদিন নাইটি পরে থাকাটাও আমার কাছে একান্তই বিরক্তির।নাইটি কথাটি এসেছে নাইট ( Night) থেকে, যে পোশাকটি রাত্রীবাসরূপে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এখন সেটি প্রায় জাতীয় পোশাকের স্থান নিতে চলেছে। তার উপর এখন নতুন ফ্যাশন ( নাকি ফ্যাসাদ) জুড়েছে নাইটির উপর একটি ওড়না জড়িয়ে নেওয়া, বা অনেকে আবার গামছা গলায় বা বুকের ওপর দিয়ে দেন। বিশ্রীতম ব্যাপার আমার কাছে।যদি কোনোদিন দেখি নাইটি পরে অফিস যাচ্ছেন কোনো মহিলা আমি অবাক হব না। অগ্রগতি হয়ত !!!
৬) হাউসকোটঃ নাইটির সঙ্গী স্বরূপ হাউস কোট । এটিও আমার অত্যন্ত অপছন্দের। অনেককেই দেখি এই পরে রাস্তায় ভ্রমনে বেড়িয়ে পরেন। সত্যি বলতে কি খারাপ লাগে খুব। ৭) ছাপা সিনথেটিক শাড়িঃ একটু কম দামী সিনথেটিক শাড়ি। ওজন বেশি হয়। আর পরেও শান্তি নেই। হড়াৎ হড়াৎ করে খুলে যেতে পারে যে কোনও জায়গায়। বিশেষ করে সাথে বাচ্চা থাকলে আর কথা নেই। খুলবেই। তাই অপছন্দ। 8) নেটের শাড়িঃ পাতলা সূক্ষ্ম নেটের শাড়ি। পরার থেকে না পরা ভালো। একটু বেশি দামীগুলোতে তবু ভারী এমব্রয়ডারি কাজ থাকলে একটু পাতে দেওয়া যায়, কিন্তু তা না হলে কিছু বলার নেই। ছবিতেই পরিষ্কার কি বোঝাতে চাইছি। এক্কেবারে দুচোখের বিষ আমার এগুলো। ৯) সিল্ক ও সিনথেটিক মেশানো শাড়িঃ আমার এই ফেব্রিকটাই ভালো লাগেনা।ঠিক করে পরাও যায়না। গরম হয় প্রচণ্ড। আর পরলে গা হাত পা কেমন জ্বালা জ্বালা করে। আমার একার নয়, অনেকেরই শুনেছি একই অনুভূতি। এক -দুবার পরেছি। তাও উপহারে পাওয়া। আর পরিনা। ১০) ফলস / নকল শাড়িঃ যে কোনো ধরণের শাড়ির নকল শাড়িগুলো আমার ভালো লাগে না। এইগুলোর ক্ষেত্রে দাম কমানোর জন্য সিনথেটিক ফাইবারের ব্যবহার করা হয়। আমার শাড়ির ক্ষেত্রে একটা নীতি আছে। আমি সারা জীবনে দুটো শাড়ি পরে কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আসল শাড়ি কিনব। ওই নকল কাঞ্জিভরম, নকল কাতান বেনারসি, নকল বালুচরি ভালো লাগেনা। তাঁর থেকে শাড়ি পরবই না। ১১) স্কিন ফিট ট্রাউজারঃ সব জিনিস সবাইকে মানায় না। স্কিন ফিট ট্রাউজার ঋত্বিক রোশান আর করিনা কাপুরকে যতটা মানাবে, বন্ধুবাবু আর আমাকে মানাবে না। আমার স্কিন ফিট ব্যাপারটাই ভালো লাগে না। ১২) বডি হাগিং পোশাকঃ শরীরের সাথে আষ্টেপিষ্টে চেপে জড়িয়ে থাকা যে কোনো জামা কাপড়। আমার দেখেই মনে হয় দম আটকে মরে যাবো। তাছাড়া আমি খুব একটা স্বচ্ছন্দও নয় এইসব পোশাকে। আমাকে মানায় ও না। তাই অপছন্দের। ১৩) লো ক্রচ/ লো রাইস জিন্সঃ আনলাকি ১৩।সত্যিই আনলাকি। এই "লো" বস্তুটি যে কি বস্তু। পরে যে কি আরাম হয় সে একমাত্র যারা পরেন তাঁরাই বলতে পারবেন। একদিন আমি অফিস থেকে মিনিবাসে করে ফিরছি।মিনিবাসের শেষের সিটে বসার জায়গা পেয়ে বসেছি। আমার পাশে পরপর তিন-চারটি ১৮-২২ বছরের ছেলে বসে। কিছুক্ষন পর তাঁদের গন্তব্য আসায় তাঁরা নামার জন্য দরজার দিকে এগোতে থাকলেন। তখনই ঘটল অঘটন। বাসে ততক্ষনে বেশ ভিড়। সবাইকে ওপরের হাতল ধরে ধরে এগোতে হচ্ছে। চারজনই প্রায় এই লোকাট জিন্স পরে।আমার সামনে দিয়েই সবাই নামছে।চারজনের মধ্যে তিনজনেরই অন্তর্বাস অল্পবিস্তর বেড়িয়ে। তিন নম্বর ছেলেটির বেলায় দুর্ঘটনা ঘটল। তিনি বোধহয় একটু বেশি " সলমন খান" হতে গেছিলেন। যেই মাথার উপরে দু হাত বাড়িয়ে বাসের হাতল ধরে দুপা এগিয়েছেন লো ক্রচ আর রইলনা। পুটুস করে প্রায় খসে পরল। বাসে গেল গেল রব। একজন টিটকিরি কেটে উঠলেন," সবাই সলমন খান হতে চাইলে হবে?সেই চেহারাটা তো দরকার।" চারনম্বর ছেলেটি একটু লম্বা বলে এক হাতেই বাসের হাতল ধরতে পারছিলেন, তিনিই তাড়াতাড়ি বন্ধুর প্যান্ট টেনে তুলে ধরলেন। ওইভাবেই পুরো দলটি হাসি টিটকিরির পাত্র হতে হতে বাস থেকে নামলেন। আমি যখনই এই ধরণের প্যান্ট পরিহিতদের দেখি তখনই সেই দৃশ্য ভেসে ওঠে আর বন্ধুবাবুকে জিজ্ঞাসা করি —" কি করতে পরেছে? খুলে যাবে তো।" উনি বড় বড় চোখ করে চুপ থাকতে ইশারা করেন। আমি রাম নাম জপি " যেন না খুলে যায়।" এযেন "দেখন্তির লাজ"। আপাতত এই কটা ধরনই মনে পড়ল। একটা কথা আমরা পোশাক পরার ক্ষেত্রে যেটা ভুলে যাই, তাহল এই ফ্যাশন বস্তুটা সাধারণত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা আমদানি করেন। যা কিনা তাঁদের চেহারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অনেক গবেষণার ফলাফল তাঁদের এক একটি ফ্যাশন। ফ্যাশন আর স্টাইল এক জিনিস নয়। স্টাইল হল নিজস্বতা। যেটা আমাকে আপনাকে নিজস্বতা ও সামঞ্জস্য দান করবে। তাই রণবীর কাপুর/ দীপিকা পাদুকোনকে যেটা মানাবে সেটা আমরা পরলে যে তাঁদের মত সুন্দর লাগবে তা নয়।এই সামান্য জিনিসটাই বেশিরভাগ মানুষ বোঝেন না। যাইহোক। অনেক জ্ঞান দিলাম। অনেকেই হয়ত মনে মনে মুণ্ডপাত করবেন।ইচ্ছা হলে দায়িত্ব নিয়ে সামনেও দিতে পারেন। করুন গিয়ে।বাসের ঘটনাটা আবার মনে পড়ে মন মেজাজ কেমন তেতো হয়ে গেল। যাই গিয়ে কফি খাই। ভালো থাকবেন।🍀 চিত্রসুত্রঃ গুগল। কিছু খারাপ ছবি দিতে বাধ্য হলাম। উপায় ছিলনা। এগুলো এই রকমই হয়। তাই ক্ষমাপ্রার্থী।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top