যে সব কারনে অনিদ্রা হয়!

Predeator24
0
অনেকে অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার সমস্যায় ভোগেন। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়। আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৯৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক কানিজ মাওলা। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto প্রশ্ন : অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া বিষয়টি কী? অনেকে অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার সমস্যায় ভোগেন। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়। আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৯৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক কানিজ মাওলা। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। urgentPhoto প্রশ্ন : অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া বিষয়টি কী? উত্তর : আমাদের শরীর সারা দিনের কাজকর্মের পর ছন্দগতভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ঘুমের প্রয়োজন পড়ে। একজন স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা, অথবা সব মিলিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা ঘুমায়। এই ঘুম যখন কম হয়, তাকে অনিদ্রা বলা হয়। কিন্তু সেটি কীভাবে হয়? ঘুম আসতে দেরি হলে অনিদ্রা হতে পারে। অথবা ঘুম এলে বারবার ভেঙে যায়। অথবা একবার ঘুম ভাঙলে পরবর্তী সময়ে ঘুম আসতে চায় না। খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙে যায়। এই সবগুলোকে বলা হয় অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া। প্রশ্ন : এই রোগে সাধারণত কী কী ধরনের সমস্যা হয়? উত্তর : তার আগে আমি একটু বলতে চাই, আসলে অনিদ্রা দুই রকমের হতে পারে। একটি হলো একিউট ইনসোমনিয়া বা হঠাৎ করে অনিদ্রা। আরেকটি হচ্ছে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রা। হয়তো পৃথিবীর এক জায়গায় থাকতেন, বাংলাদেশে এসেছেন। তখন সময়ের তারতম্যের কারণে ঘুমের অসুবিধা হলো, এটি একিউট ইনসোমনিয়া। বা কোনো একটি কারণে কোনো দুঃখজনক ঘটনা শুনল সেদিন আর ঘুম হলো না, এটি একিউট। এটি খুব অল্প সময় স্থায়ী থাকে। একদিন, দুদিন বা এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ হয়ে থাকে। আরেকটি হলো ক্রনিক ইনসোমনিয়া। এটি তিন মাসের বেশি সপ্তাহে অন্তত দু-তিনদিন হতে পারে। আর কিছু রয়েছে প্রাইমারি ইনসোমনিয়া। কোনো কারণ ছাড়াই তার ঘুম আসে না। আর একটি হলো নির্দিষ্ট কিছু কারণের জন্য অনিদ্রা। এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ হতে পারে। প্রধান কারণ, এখন কারণ আমাদের যান্ত্রিক যুগের মানসিক চাপ। কারো হয়তো চাকরি চলে গেছে, দিনের পর দিন চাকরি নেই, তার একটু মন খারাপ হতে পারে। মেয়ে বড় হয়েছে, বিয়ে হচ্ছে না সেটার জন্য মানসিক চাপ হতে পারে। এই মানসিক চাপ সবচেয়ে বড় কারণ। শারীরিক অসুস্থতা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ঘুমাতে পারছে না, এর কারণ হয়তো তার অন্য অসুখ রয়েছে। যেমন, অ্যাজমা রোগী। সারা দিন ধরে কাশছে, সারা রাত ধরে কাশছে, তো ঘুমাবে কী করে? পায়ের ব্যথার রোগী, পা ব্যথায় ঘুমাতে পারছে না। অথবা সিরোসিসের রোগী, পেটের মধ্যে পানি ভরে আছে চিৎ হয়ে শুতে পারছে না। শারীরিক অস্বস্তি বোধের কারণে এ রকম হতে পারে। তবে বেশির ভাগ সময় কোনো কারণ ছাড়াই অনেকের ক্ষেত্রে ঘুম আসে না। প্রশ্ন : কোনো কারণ ছাড়াই ঘুম না আসার সমস্যা নিয়ে যখন রোগীরা আপনাদের কাছে আসে, যখন বলে ঘুম হয় না। তখন আপনাদের কী করণীয়? উত্তর : অনেক সময় ঘুম হয় না এটিও বলে সরাসরি। আবার অনেকে বলে সারা দিন ঘুম ঘুম লাগে। যেহেতু রাতে তার ঘুম হয় না। অনেকে মনোযোগ দিতে পারে না। বিরক্ত হয়ে থাকে। কারো কথাবার্তা সহ্য হয় না। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। তখন সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে জানতে হবে আসলেই সে কতক্ষণ ঘুমায়। যদি দেখা যায়, সে দুপুরে ভাত খেয়ে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে গেল, তাহলে তো তার চাহিদা পূরণ হয়ে থাকছে। কাজেই ইতিহাস ভালোভাবে নিতে হবে। জীবনযাত্রার ধরন জানতে হবে। কোনো ওষুধ খাচ্ছে কি না জানতে হবে। যদি সে সারা রাত বা ১২টা, ১টার সময় গিয়ে বসে যায় টেলিভিশন দেখতে বা একটি সিনেমা দেখতে বা ল্যাপটপ নিয়ে বসল তা হলো তো ঘুম হবে না। সকালবেলা কলেজ থাকে, স্কুল থাকে, রান্না থাকে, সংসারের কাজকর্ম থাকে। তাই উঠতে তো হবেই। কাজেই ঘুমের সময়টা ফুরিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন : কখন বুঝতে পারেন এটি একটি জটিল সমস্যা হয়ে যাচ্ছে? এ রকম হলে কী ব্যবস্থাপনা দেন? উত্তর : আগে ইতিহাস নিয়ে আমরা জেনে নিতে চাই ঘুম কেন আসছে না। যদি কোনো নির্দিষ্ট কারণ না থাকে। তাহলে কার আচরণগত পরিবর্তন পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন করতে হবে। এই জিনিসটি খুব জরুরি। এবং পরিবারের সহযোগিতাও খুব জরুরি। একটি ১০-১১ বছরের ছেলে যদি পড়ার পরে গেম খেলতে বসে, তার একসময় অভ্যাস হয়ে যাবে। একসময় গেম শেষ হয়ে যাবে। তবে তার আর ঘুম আসবে না। বা কোনো মারামারির ছবি দেখলে ঘুম আসবে না। কাজেই আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সাহায্য থাকতে হবে। প্রশ্ন : অনেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন না। তিনি নিজে থেকেই ঘুমের ওষুধগুলো নিচ্ছেন। এবং দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভর করে আছেন। এটি আসলে কতখানি যৌক্তিক? উত্তর : এটি আসলে খুবই খারাপ। কারণ, পৃথিবীর দুই একটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি যেখানে কাউন্টারে গেলেই ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয়। নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। কাউন্সেলিং করলে, বিহেভিয়ার থেরাপি করলে ঠিক হয়ে যায়। আমরা বলি হেলথ হাইজিন (স্বাস্থ্যবিধি) তৈরি করা। ভালো ঘুমের অভ্যাস যদি তৈরি করানো যায়, অথবা করানো হয় তাহলে কিন্তু ঘুম হবে। ভালো ঘুমের অভ্যাসের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি মানসিক চাপ কমানো। যদি সত্যিই কোনো অসুখ থাকে, তার জন্য ব্যবস্থা করা। তার ঘুমের পরিবেশটা ঠিক করা। ‘আমি ঘুমাতে যাব’ এই প্রস্তুতি নেওয়া। রাতের খাবার অন্তত ঘুমানোর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে খেয়ে নিতে হবে। অনেকে সময় পায় না, রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে ব্যায়াম করে, এটি করা যাবে না। ঘুমানোর অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে শুতে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অনেক ছাত্রছাত্রী দেখা যায় বিছানায় বসে লেখাপড়া করছে। ওখানেই লেখাপড়া করছে, ল্যাপটপে কাজ করছে। আবার ওগুলো সরিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। এটা করা যাবে না। বিছানাকে শোয়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। এ রকম অনেক কিছু ঠিক করে নিয়ে ঘুমাতে হবে। শিথিল মেজাজে থাকতে হবে। প্রাইমারি ইনসোমনিয়ার ক্ষেত্রে শৈথিলীকরণ থেরাপি দেওয়া হয়। যেমন, জোরে জোরে যদি শ্বাস নেওয়া হয়। গভীর শ্বাস নেওয়া, ছাড়া। এতে পেশি শিথিল হয়। একটু হালকা ধাঁচের বই পড়তে পারে। হালকা গান শুনতে পারে। পানি খেতে পারে। এ ধরনের কিছু করে ঘুমের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ঘরের পর্দা টেনে দিতে হবে, উজ্জ্বল আলো যেন না থাকে- এই সবগুলো মিলিয়ে ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করা যেতে পারে। প্রশ্ন : তারপরও যদি এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারে, এই ক্ষেত্রে করণীয় কী? উত্তর : প্রাইমারি ইনসোমনিয়ার ক্ষেত্রে এরপরও সমস্যা হলে হিপনোটিকস দেওয়া হয়। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। এগুলো আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এগুলো নরম। তবে নরম হলেও কিন্তু এগুলোতে আসক্তি হয়। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধগুলোও ভালো কাজ করে। এগুলো খেয়ে যদি ঘুমাতে পারে, তবে খাওয়া যায়। আর যদি ডিপ্রেশনের সঙ্গে কিছু সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি ঘুম অল্প সময়ের জন্য। প্রশ্ন : যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জটিলতা কী হতে পারে? উত্তর : সেই ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে তার মানসিক সমস্যা শুরু হবে। তবে আরেকটি বিষয় হলো, অনিদ্রার সঙ্গে ওজনাধিক্য হওয়ার সরাসরি একটি সম্পর্ক আছে। যারা অনিদ্রায় ভোগে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা মোটা হয়ে যাচ্ছে। এখানে একটি হরমোনের বিষয়ও আছে। তবে তারা তো কাজ থেকে বিরত থাকছেন। এই বিরত থাকার কারণে তারা ধীরে ধীরে মোটা হয়ে যাচ্ছেন। মোটা হয়ে গেলে এর যেগুলো জটিলতা সেগুলো হয়। আর বিরক্ত থাকার কারণে তার বিপাকের বিষয়গুলোতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক দিন থাকতে থাকতে মানসিক সমস্যা হতে পারে। এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও এসে যেতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে। তাই ঘুম নিয়ে বেশি সমস্যা মনে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রশ্ন : অনিদ্রার সমস্যা দীর্ঘদিন যেন না থাকে, এ জন্য আপনার পরামর্শ কী? উত্তর : ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রার হাত থেকে বাঁচার জন্য একটি সুস্থ জীবনযাত্রা বেছে নিতে হবে। সবকিছু যেন নিয়মানুবর্তী হতে হবে। এরপর ভালো ঘুমের অভ্যাস যদি তৈরি করেন, ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির মধ্য দিয়ে যদি যান, তাহলেই অনিদ্রার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং অনেক শান্তিতে থাকতে পারবেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top